সম্পন্ন হল গোপাল স্যারের মানবিক ব্যক্তি উদ্যোগের সুপ্ত প্রয়াস


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “কেবলমাত্র সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে বা জলের দিকে তাকিয়ে থাকলেই সমুদ্র পার হওয়া সম্ভব নয়”৷ তাই কোন কাজকে সফল করতে হলে তাতে অবশ্যই আমাদেরকে স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পূর্ণ মনোনিবেশ এবং হস্তক্ষেপ করতে হয়৷ বিশেষ করে মানবিক সহযোগিতামূলক কাজগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় গুটিকতক সহানুভুতিশীল জনদরদী এবং সেবাপ্রণয়ী ব্যক্তি বা কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারাই মানবিক কল্যাণমূলক কাজগুলো সম্পাদিত হয়৷ অনাথ আর সম্বলহীন মানুষেদের দেখে যদি মানবিক সহযোগিতা করার জন্য মনে প্রগাঢ় ইচ্ছা জন্মায়, তবে যৌথ নয় বরং ব্যক্তি উদ্যোগেই এই মহতী কাজটি করা সম্ভব৷ ঠিক এমন কাজটিই ঘটেছে গোপাল স্যারের ক্ষেত্রে৷

গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২২ইং পবিত্র মহালয়া তিথীতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া আউলিয়ার ঘাটে বোদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দিরে আগত পুন্যার্থীরা নৌকা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হয়৷ এতে ৮০জনেরও অধিক মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়৷ ধারণামতে শতাধিক যাত্রী ছিল ঐ নৌকায়৷ অনেক পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদেরই মহাপ্রয়াণ ঘটে এই ট্রাজেডিতে৷ ফলে পরিবারের বাকি সদস্যরা নিঃস্ব হয়ে যায়৷ যার ওপর নির্ভর করে পরিবার চলত৷ সে ব্যক্তিই চলে গিয়েছে অজানায়৷ প্রয়াতদের পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উক্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও তা বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নয়৷ এমন সময় মানুষ হিসেবে আমার নিজের করার কিছু নেই কি?


ঠিক এমন প্রশ্নই যার নিজ অন্তর্মহলে জেগে উঠেছে তিনি হলেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্রী গোপাল রায় স্যার৷ এ নিয়ে তিনি বেশ কিছু জনের সাথে মতবিনিময় করেন এবং কিছু উদ্যমী তরুণদের ধারণা দেন দুর্গা পূজা চলাকালীন দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যেক মন্ডবে মন্ডবে বুথ চালু করে অর্থ সংগ্রহ করতে৷ সেই সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নৌ ট্রাজেডিতে প্রয়াতদের পরিবারকে কিঞ্চিত হলেও সহযোগিতা  করা সম্ভব হবে৷ কিন্তু সবার মনেই কি মহতী চেতনা এমনভাবে জাগ্রত হয়?

 

তরুণেরা পূজার চলাকালীন সময়ে আনন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক৷ তাই এই উদ্যোগটি নিতে বললে তারা অপারগতা প্রকাশ করে৷ তবুও গোপাল স্যার নিরুৎসাহী হয়ে যান নি৷ তিনি নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিক অবস্থান থেকেই বিভিন্ন কর্মস্থলের সেবাপ্রণয়ী ব্যক্তিবর্গের কাছ হতে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ শুরু করেন এবং অপ্রত্যাশিত সাড়া পেয়ে যান৷ এতে স্যারের শিক্ষার্থীরাসহ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সহযোগিতা করে৷ তার এই উদ্যোগকে সকলেই সাধুবাদ জানান৷ অবশেষে বিভিন্ন জনের কাছ হতে অনুদান সংগ্রহ করে তা কিছু ক্ষতিগ্রস্থ নিঃস্ব পরিবার গুলোর মধ্য বন্টন করে দিতে সমর্থ হোন৷


গত ২রা ডিসেম্বর ২০২২ইং, শুক্রবার সংগৃহীত অনুদান নিয়ে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী বিষ্ণু মন্দির প্রাঙ্গণে হাজির হন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে৷ প্রয়াতদের প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ৫,০০০(পাঁচ হাজার)টাকা করে মোট দশটি পরিবারকে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক অসহায় ছাত্রকে ২,৫০০(দুই হাজার পাঁচ শত)টাকা অর্থসহায়তা প্রদান করে তার এই ব্যক্তি উদ্যোগে যারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ 


যৌথভাবে সহযোগিতা ও অনুদান প্রদানে সম্পৃক্ত ছিলেন পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ এর অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক শ্রী আশীষ রায় এবং দেবীগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্রী মহাদেব রায়৷ 

আজ বলতে ইচ্ছে করে___

মানবতার সেবায় যার পরিতৃপ্তি হয়,

জীবন তার প্রতি পদেই সর্ব মঙ্গলময়৷


পরিশেষে আমার লেখার মাধ্যমে বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও আন্তরিক অভিবাদন জানাই এই মহান উদ্যোক্তা শ্রী গোপাল রায় স্যার’কে৷

___________

পবিত্র রায়

দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়

Post a Comment

0 Comments