উপনিষদের সংখ্যা অনির্দিষ্ট, তবে তেরোটি উপনিষদ প্রধান ও প্রাচীন বলে স্বীকৃত। সেগুলি হলো: (ঋগ্বেদের) ঐতরেয়, কৌষীতকি, (সামবেদের) ছান্দোগ্য, কেন, (কৃষ্ণ যজুর্বেদের) তৈত্তিরীয়, কঠ, শ্বেতাশ্বতর, মৈত্রায়ণীয়, (শুক্ল যজুর্বেদের) বৃহদারণ্যক, ঈশ, (অথর্ববেদের) মুন্ডক, প্রশ্ন এবং মান্ডূক্য। এগুলির মধ্যে কয়েকটি শুধু পদ্যে এবং অবশিষ্টগুলি গদ্যে-পদ্যে রচিত। রচনাকাল সাধারণভাবে প্রাকবুদ্ধ যুগ (খ্রিপূ ৬ষ্ঠ শতক)।
উপনিষদেই ভারতীয় দার্শনিক চিন্তার প্রথম উন্মেষ ঘটে। পূর্ববর্তী যুগের ক্লান্তিকর যজ্ঞীয় জটিলতা, কর্মকান্ডসংক্রান্ত চুলচেরা বিচার ইত্যাদি থেকে মুক্তির উপায় এবং চিন্তার জগতে এক নতুন পরিমন্ডলের সন্ধান পাওয়া যায় উপনিষদে। সমকালীন সামাজিক জীবনেরও কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায় কোনো কোনো উপনিষদ থেকে। কারও কারও মতে, বিজ্ঞানচেতনার সর্বপ্রথম উন্মেষের পরিচয়ও উপনিষদে পাওয়া যায়।
উপনিষদে দেবতার কোনো স্থান নেই, একমাত্র ব্রহ্মই এর প্রধান আলোচ্য বিষয়। উপনিষদে বলা হয়েছে যে, জগতের মূলে আছেন এক ব্রহ্ম; তিনি সত্য, চৈতন্যময় ও জ্ঞেয়; আর সব অসত্য, জড় ও জ্ঞাতা। জীব এবং ব্রহ্ম এক, এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ব্রহ্মের সাক্ষাৎকার হলেই জীবের মুক্তি হয়। ব্রহ্মপ্রাপ্তিই হচ্ছে জীবের একমাত্র লক্ষ্য।
সুপ্রাচীন কালে যখন বিশ্বের অনেক দেশেই সভ্যতার আলো ফুটে ওঠে নি তখনও যে ভারতভূমি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল প্রজ্ঞাশীল মননের আলোকচ্ছটায়, তারই অবিস্মরণীয় বিবরণী এ গ্রন্থাবলি। হিন্দুদের নিকট বেদ, গীতা, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি গ্রন্থের মতো উপনিষদও ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। অনেকেই গীতার মতো নিয়মিত উপনিষদও পাঠ করেন। রাজা রামমোহন রায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ এ উপনিষদের ভিত্তিতেই ব্রাহ্মধর্মের প্রচার করেছিলেন। উপনিষদ ভারতীয় দর্শনচিন্তার শ্রেষ্ঠ ফসল। [মৃণালকান্তি গঙ্গোপাধ্যায়]
তথ্য সংগ্রহ: বাংলাপিডিয়া
0 Comments
www.facebook.com/mongoldhoni.debiganj